অপরাধ

মলদ্বার বেরিয়ে আসা বা আলিশ রোগে যা করণীয়

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আদি থেকেই এই রোগটি চিকিৎসকদের কাছে পরিচিত। এ রোগে রোগীর পায়ুপথ মলদ্বারের বাইরে বেরিয়ে আসে। বিশেষত পায়খানা করার সময় বাইরে ঝুলে পড়ে।

এরপর রোগী হাত দিয়ে এটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার রোগীরা এটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে যেমন সিলেটে বলে আলিশ, হবিগঞ্জ এলাকায় বলে কম্বল বের হয়েছে এবং বরিশালের লোকেরা বলে আইলতা বের হয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক এ রোগটি শিশু ও বৃদ্ধ বয়সে বেশি হয়।

মহিলাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শিশুদের সাধারণত তীব্র ডায়রিয়ার পর এ রোগটি দেখা দেয়। তল পেটের বা পেলভিসের কিছু গঠনগত সমস্যা এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় পায়ুপথ বা রেকটাম অন্যান্য মাংসপেশীর সাথে আকড়ে থাকে। কিন্তু এ রোগীদের ক্ষেত্রে এটির অভাব দেখা যায়।

এ রোগের বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে মলত্যাগের অভ্যাসের অসংগতি যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, মহিলাদের বন্ধ্যত্ব, রেকটামের সাথে সন্নিহিত অস্থির দৃঢ় সংযুক্তির অভাব ইত্যাদি। মানসিক রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। জগদ্বিখ্যাত পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ ডা. গলিঘারের মতে তার দেখা রোগীদের এক-তৃতীয়াংশই মানসিক রোগী।

উপসর্গ: রোগীরা সাধারণত অভিযোগ করেন, তাদের মলদ্বার পায়খানা করার সময় অনেকখানি নিচে ঝুলে পড়ে এবং চা না দিলে ভেতরে যায় না। ওজন তুললে অথবা কাশি দিলেও কখনো কখনো বেরিয়ে আসে।

সাধারণত রক্ত যায় না। তবে মিউকাস বা আম যায়। যখন পায়ুপথ বেশি ঝুলে পড়ে এবং ঢুকানো যায় না তখন রক্ত যেতে পারে। প্রায় অর্ধেক রোগী কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন।

অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীরা পায়খানা আটকে রাখতে ব্যর্থ হন। কখনো কখনো ঝুলে পড়া অংশটি চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকানো যায় না। অবস্থা আরো খারাপ হলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পচন ধরতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এর সাথে জরায়ুও বেরিয়ে আসতে পারে এবং মূত্রথলিও ঝুলে পড়তে পারে যার কারণে প্রস্রাবের অসুবিধা হতে পারে।

রোগের শুরুতে রোগীরা বলেন, তাদের মনে হয় পায়ুপথ ভরা ভরা লাগে এবং ভেতরে কোনো চাকা বা মাংসের দলা রয়েছে বলে মনে হয়। অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে সমস্যা আরো বেশি মনে হয়।

মলত্যাগ করতে বা বায়ু ত্যাগ করতে কিছুটা বাধা লাগে। পায়খানা করে পেট ক্লিয়ার হয়নি বলে মনে হয় এবং আঙুল দিয়ে পায়খানা করতে হয়। কারো কারো মলদ্বারের চারদিকে ব্যথা হয় যা নিতন্ত অথবা পায়ের দিকে বিস্তৃত হতে পারে।

চিকিৎসা: প্রলাপস দু’ধরনের হতে পারে। আংশিক (চধৎঃরধষ) যে ক্ষেত্রে মিউকাস ঝিল্লি ঝুলে পড়ে এবং সম্পূর্ণ (ঢ়ৎড়পরফবহঃরধ) সে ক্ষেত্রে পায়ুপথের প্রাচীরের সব স্তরসহ ঝুলে পড়ে।

প্রলাপস যে প্রকারেরই হোক এর চিকিৎসা অপারেশন। তবে কোনো রাগী যদি চিকিৎসার জন্য অনুপযুক্ত বিবেচিত হন বা অপারেশন করতে রাজি না হন তাহলে কিছু রক্ষাণশীল পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।

যেমন মলত্যাগের সময় মলদ্বার হাত দিয়ে চেপে উপরের দিকে রাখতে হয়, নিতম্ব দু’টিকে টেপ দিয়ে আটকে রাখা, মলদ্বারের মাংসপেশীর ব্যায়াম, রিং লাইগেশন পদ্ধতি ইত্যাদি।

অপারেশন পদ্ধতি: এ রোগের চিকিৎসায় ৫০ ধরনের অপারেশন পদ্ধতি চালু রয়েছে। কোনোটি মলদ্বারে করতে হয় আবার কোনো কোনোটি পেট কেটে করতে হয়। এ রোগটি নিয়ে সামজের ভ্রান্ত ধারণা ও বিভিন্ন কুসংস্কার রয়েছে নরসিংদী থেকে আগত ১২ বছরের একটি ছেলের এ রোগ ছিল।

রোগ রয়েছে। ১২ বছর ধরে মলত্যাগের পর পায়ুপথ বেরিয়ে আসত। এরপর চাপ দিলে ভেতরে ঢুকে যেত। তাকে জিজ্ঞেস করলাম এতদিন কেন চিকিৎসা করাননি?

উত্তরে তিনি বলেন, তিনি এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেছেন এবং ভেবেছেন এর কোনো চিকিৎসা নেই। তার ছেলে একই রোগের যখন চিকিৎসা হলো এবং সে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেল। তখন মা ভাবলেন এর সঠিক চিকিৎসা আছে। পরে আরো আশ্চর্য হলাম। জিজ্ঞেস করলাম সাথে আগত ভদ্রলোকটি কে?

তিনি বললেন তার ভাই। স্বামী কেন আসেনি জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, তিনি এ ব্যাপারটি জানেন না। আমি বললাম আপনার ১২ বছর ধরে এই সমস্যা কেন তাকে জানাননি। তিনি বললেন, স্বামীকে জানালে তিনি খারাপ ভাববেন। তাই কখনোই জানাতে চাই না।

এরপর তার মলদ্বারে অপারেশন করায় তিনি ভালো রয়েছেন। উল্লেখ্য, এই মহিলা মাঝে মাঝেই দিনে ৮-১০ বার পায়খানা করতেন। এ রোগটি কেবল ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম বা অতিরিক্ত সংবেদনশীল যান্ত্রিক জটিলতা। একই সাথে পেটের এই দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়ের চিকিৎসায়ও তিনি উপকৃত হয়েছেন।

মতামত: বিগত নয় বছরে ২৯ হাজার ৬৩৫ জন রোগীর ওপর গবষেণা করে দেখেছি যার শতকরা ১ ভাগ রোগী রেকটাল প্রলাপস রোগে ভুগছেন। এসব রোগীর কেউ কেউ ১০-৩০ বছর ধরে এ সমস্যায় ভুগছেন। এ ক্ষেত্রে পায়খানা করার সময় মলদ্বার বাইরে বেরিয়ে আসে।

মলত্যাগের পর রোগী চাপ দিয়ে এটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। এতে সাধারণত রক্ত যায় না। মিউকাস বা আম জাতীয় নিঃসরণ হয় মলদ্বারের আশপাশে। মলদ্বার ভেজা ভেজা থাকতে পারে, কখনো কখনো বের হওয়া মলদ্বারে ভেতরে ঢুকানো যায় না তখন বেশ ব্যথা হয় এবং জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হয়। এ রোগে এ পর্যন্ত যাদের অপারেশন করেছি তাদের দু’জন ভালো হননি এবং একজন বয়স্ক রোগী মারা গেছেন।

এ রোগীটির মলদ্বার বাইরে বের হলে আর ঢুকানো যায়নি। যার কারণে সেখানে গ্যাংগ্রিন বা পচন ধরে যায়। তার পচন ধরা মলদ্বার কেটে ফরার পরও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ রোগীটি প্রায় ৩০ বছর ধরে এ রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু তীব্র সমস্যা না দেখায় তিনি অবহেলা করেছেন।

অবস্থা যখন তীব্র আকার ধারণ করে মলদ্বার ভেতরে ঢুকাতে পারেননি এবং মলদ্বারে পচন ধরে যায় তখন তিনি চিকিৎসার জন্য আসেন। ইতোমধ্যে আমরা এ রোগের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উবষড়ৎসব’ং ঙঢ়বৎধঃরড়হ করেছি। এটি মলদ্বার দিয়ে করা হয়। পেট কাটা লাগে না। এই বিশেষ ধরনের অপারেশনের ফলে ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়েছেন।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ৩:৪৫ অপরাহ্ণ ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • টেক

বিডিঅ্যাপস কানেক্ট: বিডিঅ্যাপস টপ ডেভেলপারস মিটআপ অনুষ্ঠিত

সম্প্রতি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো বিডিঅ্যাপস কানেক্ট: এঙ্গেজ এন্ড ইনোভেট - টপ…

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:০৮ অপরাহ্ণ
  • অর্থনীতি

আগস্টে কমল মূল্যস্ফীতি

চলতি বছরের গত আগস্ট মাসে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:১৫ অপরাহ্ণ
  • জাতীয়

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করা হবে: ড. ইউনূস

জুলাই বিপ্লবে সকল শহীদে স্বপ্ন পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:০৭ অপরাহ্ণ