‘আমার লগে গলা চেচাইয়্যা কথা কয়, হের লেইগ্যা গালে কামড় দিছি’

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রী ছালেমা খাতুনকে অমানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে। নির্যাতনের সময় ছালেমাকে ব্যাপক মারধর করে গলা চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা চালায় স্বামী।

প্রাণ বাঁচাতে ছালেমা চিৎকার শুরু করলে তার গালে কামড় দিয়ে বসিয়ে দেয় স্বামী। এ ঘটনায় ছালেমা গত সোমবার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অভিযোগটি মামলা হিসাবে থানায় নথিভুক্ত হয়নি।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছালেমা খাতুনের বাড়ি উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের চড়ঘোড়ামারা গ্রামে। সুমনের বাড়ি ওই ইউনিয়নের সিংজানি গ্রামে। দুজনেই বিবাহিত ছিলো।

তবে চার বছর আগে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে ছালেমাকে তার প্রথম স্বামীর ঘর থেকে ফুসলিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে সুমন। পরে সুমন ঘরে প্রথম স্ত্রী রেখে ছালেমাকে শুধুমাত্র হুজুরের মাধ্যমে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদা দেয়। ওই বিয়ের কাবিননামা নেই।

এরপর দুজনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে কলতাপাড়া বাজারে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। কিন্তু বিয়ের পরপরই সুমন স্থানীয় অপর এক নারীর সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এসব বিষয় নিয়ে ছালেমা প্রতিবাদ করলে সুমন তাকে প্রতিনিয়ত মারধর করে ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে।

সর্বশেষ গত শনিবার স্থানীয় সিংজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রকাশ্যে ছালেমা মারধর করে তাকে গলা চেপে হত্যার চেষ্টা চালায় সুমন।

এসময় প্রাণ বাঁচাতে ছালেমা চিৎকার শুরু করলে তার গালে কামড় দিয়ে বসিয়ে দেয় সুমন। স্থানীয়া এসে স্বামীর নির্যাতন থেকে ছালোমাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী ছালেমা বলেন, সুমনের লেইগ্যা স্বামীরা ঘর ছাইর‌্যা আইছি। বিয়ার পর সে যৌতুকের টেকার লেইগ্যা মাইর দিতো, বেতনের টেকাটাও জোর কইর‌্যা লইয়্যা যাইতো। অহন আমারে থইয়্যা অন্য বেডির লগে প্রেম করা ধরছে ।

মোবাইলেও কথা কয়। আমি কিছু কইতে গেলেই আমরে মাইর দেয়। কয়দিন আগে আমারে মাইর-ধইর কইর‌্যা আমার গলা চাইপ্যা ধরে। আমার সারা শরীলে ওর মাইরের চিহ্ন আছে। ওই আমার গালডার মধ্যেও কামড় দিয়া দাগ করছে। অহন সরমে মুখটা ঢাইক্যা রাখি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন মিয়া হুঙ্কার দিয়ে বলেন, বউরে (ছালোমা) এইডা কি মাইর মারছি। এর চেয়েও কতো বেশি মাইর ওরে আমি মারছি। চোরের চেয়েও ওরে বেশি মারছি। ওই আমার লগে গলা চেচাইয়্যা কথা কয়, হের লেইগ্যা গালে কামড় দিছি।

পরকীয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, আমি কোনো নারীর লগে প্রেম-ভালবাসা করিনা। আমি কন্যারাশি হওয়ায় নারীরাই আমার লগে প্রেম-ভালবাসা করে।

ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার বলেন, এই দম্পত্তি সমাজকে কলুষিত করেছে। প্রকাশ্যে অশালীন আচারণ- মারপিট, গালিগালাজে সাধারণ মানুষও অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহমদ বলেন, ভ্ক্তুভোগী নারীর অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন: