‘এইতো মা, কাজ শেষ করেই আসতেছি’

এইতো মা, কাজ শেষ করেই আসতেছি’, মেয়েকে এমন মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আর ফেরেননি টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক। যদিও ফিরেছেন; তবে লাশ হয়ে। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন একরাম।

শেষবারের মতো স্ত্রী ও মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছেন একরাম। বের হয়েছে সেই কথোপকথনের অডিও। মেয়ের আকুতি বাবা কখন আসবে, আর বাবার নিশ্চিত জবাব ‘এইতো মা কাজ শেষ করে আসছি’। কিন্তু মেয়ে আর বাবাকে ফিরে পায়নি।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। তারপরও শুরুতে চলমান মাদকবিরোধী আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, কারণ আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থাও মাদকের ব্যাপারে অতটা কঠোর ছিল না।

বড় বড় মাদক সন্ত্রাসরা, প্রশাসনের বড় বড় কর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের পা চেটে জামিনে মুক্তি পেয়ে যেত। অন্তত এমন চলমান কঠিন অভিযানে দেশে মেধাবীরা বাঁচবে, এই নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলাম।

খারাপদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই; অন্তত যারা মাদক ব্যবসায়ী তাদের অধিকার নেই। সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ভেবেছি। সংশয় ছিল এটি যেন ভিন্ন পথে ধাবিত না হয়।

অভিযান শুরুর পর নিহতের সংখ্যা প্রতিদিন গণমাধ্যমগুলো হালনাগাদ করতো। এসব দেখে খারাপ লাগতো না, এই ভেবে যে দেশ মাদকমুক্ত হচ্ছে, মাদকসন্ত্রাস নির্মূল হচ্ছে।

একরাম হত্যার পরপরই যখন জাতীয় পত্রিকা ও বিশ্বস্ত পোর্টালগুলোতে ভেসে উঠলো তিনি সৎ ছিলেন এবং সরকার দলের একজন ত্যাগী নেতাও ছিলেন । তার বিরুদ্ধে কোন গুরুতর অভিযোগ নেই, কোন মামলাও নেই। সাদামাটা জীবন যাপন করতেন।

যখন জানলাম তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখনই নিজের প্রতি আর আমাদের প্রচলিত সিস্টেমের প্রতি অনীহা ভাব চলে আসলো। সমাপ্তি ঘটলো আমার কয়দিন আগের উচ্ছ্বাসও।

আজ অডিও ক্লিপটি শোনার পর নিজেকে স্থির রাখা সত্যি কষ্ট হচ্ছিল। অডিওতে স্পষ্ট শোন যাচ্ছে একরামের কান্নাজড়িত কণ্ঠ, গুলির শব্দ, বুক ভেদ করে ২টি বুলেট এবং ঐ ঘটনার নাম দেওয়া হলো ‘বন্দুকযুদ্ধ’।

ফোনের ওপাশ থেকে আব্বুর জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকা ছোট্ট মেয়েটি ‘আব্বু আব্বু’ বলে ডাকছে, সহধর্মীনীর চিৎকার, স্বামীকে বারবার নির্দোষ দাবি করেও থামাতে পারেননি আইনের পোশাকধারীদের।

দুর্বিষহ কালোরাত্রীর মতো চালিয়েছে তাদের হত্যাযজ্ঞ। একদিকে নিস্তেজ হচ্ছে পরিবারের সবচেয়ে আপনজন, আর তা শুনতে হচ্ছে স্ত্রী-সন্তানদের। কী এক নির্মমতা। একী বিভৎসতা হত্যার?

কিছু মানুষ দেখলাম বলে বেড়াচ্ছে, এমন অভিযানে ২/১ জন ভালো মানুষ মরতেই পারে। মন থেকেই চাইব বিদ্যমান এই অভিযান আরও কয়েকমাস চলুক এবং যে ২-১ শতাংশ ভালো মানুষ নিহত হবে তারা যেন এদের আপন কেউ হয়। সূত্র: চ্যানেল আই

শেয়ার করুন: