মধ্যরাতে আনন্দ দিতে পারি নাই বলে দু:খিত দোস্ত !

পরানের বন্ধু একখানা কাপল ছবি ইনবক্স করেছেন মাঝরাতে। চকচকে প্রেমময় ছবি। যুগল হাত দুটো ধরে বসে আছেন নদীর পাড়ে। ছবিতে যুগলকে অত্যন্ত হাসিখুশি প্রাণবন্ত সুখী মনে হচ্ছে।

এককথায় প্রথম দেখায় অনেকেরই ভালো লাগবে। ছবিখানা দেখে আপ্লুত হয়ে পড়বার আগেই বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন-‘ কীরে, মনে আছে তো সবকিছু?’ অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে ভড়কে গেলাম কিছুটা।

বন্ধু কী ভেবেছে আমার বাংলা সিনেমার মতো মাথায় এক বাড়িতে স্মৃতি বিলুপ্ত হয়েছে? এরকম ভাবার কারণ কী এটা ভাবতে ভাবতে কষ্টে হাসফাঁস লাগছিলো।

মনের দুঃখে বললাম-‘কীরে দোস্ত! আমার তো স্মৃতি-টিতি সব ঠিক আছে! মনে না থাকার কোন কারণ তো নেই!’ সে বললো-‘মনে আছে কীনা দেখলাম আর কী!’

ঘটনা হলো কাপল ছবিটা আমারই। সাত বছর আগের। ছবিটা দেখতে দেখতে ফোনের ও প্রান্তে থাকা বন্ধুর চেহারা কল্পনা করছিলাম। কোন ধরনের পৈশাচিক আনন্দ তিনি পাচ্ছেন বুঝতে চেষ্টা করলাম।

এরপর বললাম-‘দোস্ত, ছবিটায় যে মেয়েটা আছে সেটা আমি, আমার হাতটা যে ধরে রাখছে সে আমার এককালের প্রেমিক। গুলুমুলু প্রেমবস্থায় তিনি হঠাত একদিন ধ্যান-ধারণায় মুড়িয়ে গেলেন,

তার গতি স্লো হয়ে গেলো, তিনি পিছিয়ে পড়লেন সোয়া চৌদ্দশ বছর। আমি তো আর আমার হাঁটা থামাইনি, তাই দুইজনের পথের দূরত্ব হয়ে গেলো সোয়া চৌদ্দশ বছর।

কী করবো বল! অত যোজন যোজন দূর থেকে কী প্রেম করা যায়? তাই আর হলো না আর কী! কিন্তু তুই তো জানতিস এগুলো। আজ হঠাৎ ছবি দিলি কী মনে করে?’ সে চুপচাপ, রা নেই।

ইনবক্সে মধ্যরাতের শুনশান নিরবতা। বন্ধুর বুঝি যা মনে হয়েছিলো সেই কাজ হাসিল হয় নাই, তাই ঘুমিয়ে পড়েছে। বন্ধুর কোন উত্তর না পেয়ে মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে আবার ইনবক্স চেক করলাম। তখনো ইনবক্স গড়ের মাঠ! আবার লিখলাম-‘তোকে সুখ দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত। মাফ করে দিস। অবশ্য বেশি সুখ পেতে ইচ্ছে হলে অন্যের ওপর নির্ভর করে কী করবি? নিজের ইয়ের দিকে তাকিয়ে সুখ নিতে পারিস।’

মানুষের যে কীসে আনন্দ, কীসে বেদনা, কীসে দিল খুশি হয় তা এ প্রকৃতি উদ্ধার করতে পেরেছে বহু আগেই। এই যে মাঝরাতে একটা মেয়েকে তার প্রাক্তন প্রেমের ছবি ইনবক্স করে যে পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার বাসনা, এটাও একধরনের আনন্দ।

এখন আমি সেই আনন্দ বন্ধুকে দিতে পারি নাই। কারণ আমি লজ্জা পাই নাই, বুক ধরফর করে নাই, কান্না পায় নাই, রাগও হয় নাই- বন্ধু আমার বোধহয় এজন্যই রাগ করেছিলো।

খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো, বন্ধু কী প্রাক্তন প্রেমিককেও ছবি পাঠায়ে জিজ্ঞেস করছে কীনা-‘কী ভাই, মনে আছে তো সবকিছু?’ জানি ওটা করবে না। কারণ সেইখানে আনন্দ পাবে না, মজা পাবে না।

বেশ ক’দিন আগেও এক ছোটভাই স্ট্যাটাসে ওপেন জানতে চাইলেন-‘ওমুককে মনে আছে কিনা’, সাথে হাসির ইমো। আমি কমেন্টটা ডিলিট করিনি। থাকুক।

ওনারা যদি সুখ পায় তবে পাক, মস্তিষ্কভর্তি যৌনানুভূতির সুখ নিয়ে ওনারা একটা মেয়েকে রাত বিরাতে ইনবক্সে প্রাক্তনের ছবি দিয়ে যৌনসুখ পেলে পাক, ওনাদের নিজেদের ইয়েতে আঙুল দিয়েও সুখ পেলে পাক।

আমার কিসের লজ্জা? আমার কীসের দুঃখ? আমার কীসের অপরাধ? কষ্টের বিষয় হলো মেয়েটা এহেন পরিস্থিতিতে কষ্ট না পেলে লজ্জা না পেলে, আড়ষ্ট না হলে, আবার ওনাদের সুখের বীর্য ঝরে না!

শোনেন হে ভগ্নীগণ, এতো দুঃখ, এতো কষ্ট এত লজ্জা নিয়ে কী করবেন বলেন! আপনি একটি প্রেম করুন বা বারোটি, আপনার জীবনের বারোটা বাজানোর জন্য সর্বদা রেডি আছেন এনারা।

কিন্তু ভুলে যেয়েন না, আপনার জীবনের দুঃখ-সুখের ঘড়ি আপনার হাতেই। বারোটা তেরোটা বাজাতে চাইলে নিজেই বাজান, অন্যেকে নিজের জীবনের ঘড়ি ইজারা দেয়ার দরকার নেই। কে কী বললো তাতে বালিশে মুখ গুঁজে হাত পা নেড়ে ন্যাকা কান্না না কেঁদে লাথি মারুন।

যে সমাজ আপনার লজ্জায় আনন্দ পায়, আপনাকে অসতী অলক্ষ্মী অপয়া কুলটা কলঙ্কিনী নষ্টের তকমা দিয়ে পুরুষটিকে সেইফ জোনে রেখে বড়জোর কাপুরুষ বলে, যে সমাজে আপনাকে দেখা হয় যৌনতার প্রতীক হিসেবে, আর পুরুষটি শক্তি শৌর্যবীর্যের প্রতীক, সে সমাজে আপনি চাইলেই নষ্ট, আপনি না চাইলে নষ্ট না।

আপনার ওপরেও নির্ভর করুক সমাজ, সমাজের ওপর আপনি নির্ভর করে আর কত?সমাজের জন্মে আপনার অবদান কম কিছু নয়। তাই নিজেকে মেলে ধরুন, কর্মে শিক্ষায় আলোয়। শুধুই যৌনতার প্রতীক হিসেবে নয়।

শেয়ার করুন: