ফুটবল বিশ্বকাপে এবারের আর্জেন্টিনাকে যে কারণে এখন সবাই ভয় পাচ্ছে

সেন্ট পিটার্সবার্গের গ্যালারিতে তিনি ছিলেন যথারীতি। ছিলেন তাঁর যাবতীয় পাগলামি নিয়ে। এই চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছেন আর্জেন্টিনাকে, এই হতাশায় মুখ গোমড়া করে বসা, এই নাইজেরিয়ান সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দ করছেন; আবার তাদের দিকে মাঝের আঙুল তুলে ব্যঙ্গও।

আরে, একসময় তো দেখি ঘুমিয়েও পড়লেন! খেলা শেষে আরেক কাণ্ড। একা একা হেঁটে যাওয়ার অবস্থা থাকল না। অন্যদের সাহায্য নিয়ে ছাড়তে হলো গ্যালারি।

আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়ার ম্যাচের রোমাঞ্চ-উত্তেজনা আসলে বড্ড বেশি হয়ে গিয়েছিল এমনকি ডিয়েগো ম্যারাডোনার জন্য!

তা কী হয়নি এই ম্যাচে! প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার দাপটে এগিয়ে যাওয়া, লিওনেল মেসির জাদুকরী গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে নাইজেরিয়ার প্রবল প্রত্যাবর্তন; পেনাল্টি থেকে লক্ষ্য ভেদ করার পর আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেওয়ার কত সুযোগও তো পেয়েছিল তারা।

পেনাল্টির আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে; দু-দুবার ফ্রাঙ্কো আরমানিকে একা পেয়েও গোল করতে পারেনি সুপার ইগলরা। শেষে ৮৬তম মিনিটে মার্কোস রোহোর গোলে অবশেষে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। এরপর মাঠে, গ্যালারির আকাশি-সাদায় উদ্যাপনটা হলো বহুদিন মনে রাখার মতো।

অথচ প্রথম দুই খেলায় জয়বঞ্চিত থাকার পর এই আর্জেন্টিনাকে নিয়ে কত কথা। কোচ হোর্হে সাম্পাওলির বরখাস্তের গুঞ্জন, খেলোয়াড়দের বিদ্রোহের ফিসফাস—আরো কত কী! এক জয়েই সেসব এখন দূর অতীত।

আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে প্যাঁচামুখ করে থাকা সাম্পাওলির মুখে এদিন ফোটে হাসি, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ম্যাচ শুরু করেছি আমরা। প্রথমার্ধ খুব ভালো গেছে। মিডফিল্ডে অনেক বল পেয়েছি; আক্রমণেও উঠেছি।

কিন্তু ওরা পেনাল্টি পাওয়ার পর আমরা নার্ভাস হয়ে পড়ি। নক আউট পর্বে যেতে না পারার আশঙ্কায় খেলা এলোমেলো হয়েছে কিছুটা। তবে আমরা; সবাই আনন্দিত যে, শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি। আমরা আগেই বলেছি পাঁচ ফাইনাল জিততে চাই। এর প্রথমটি জিতলাম আজ।’

এ ম্যাচ দিয়ে সত্যিকার অর্থে বিশ্বকাপ শুরু হলো আর্জেন্টিনার। মেসিরও। প্রথমার্ধে দুর্দান্ত এক গোল করেছেন; আরেক ফ্রি-কিকে বল লেগেছে বারে। আরো কয়েক পাসে প্রতিপক্ষের রক্ষণ খুলে যায় হাঁ করে। বিরতির সময় মাঠের নামার ঠিক আগ মুহূর্তে টানেলে সতীর্থদের শেষ উজ্জীবনী কথাও বলেছেন অধিনায়ক। কোচ নন।

জয়সূচক গোল করা মার্কোস রোহো সেটি বলেছেন মিক্সড জোনে, ‘মেসি সবাইকে বলেছে, এটি বাঁচা-মরার ব্যাপার। গোল করা যে আমাদের দায়িত্ব, সুযোগ পেলে গোলে শট নেওয়া যে কর্তব্য—সেটি মনে করিয়ে দিয়েছে।

এটি খারাপ দিকেও মোড় নিতে পারত; আমরা সেটি করতে গিয়ে গোল খেতেও পারতাম। কিন্তু লিও দৃঢ়তার সঙ্গে একই কথা বলছিল বিরতির সময়। সুযোগ পেলে আমি যেন ডিফেন্স থেকে দৌড়ে ওপরে যাই—সেটি আমাকে বলছিল।

মাসচেরানোকেও। সবাইকে সব ভুলে শুধু আক্রমণ করতে বলছিল। লিও ম্যাচটি পড়তে পেরেছে ভালোভাবে; ঝুঁকি নিয়েছে। ও সত্যিই এক নেতা। সবার সেরা।’

শেয়ার করুন: