দুই মুখ নিয়ে জন্ম নেয়া এক অনন্য মানুষের গল্প!

প্রযুক্তির উন্নতির আগে মানুষের জৈবিক ত্রুটিগুলোকে পৌরাণিক ব্যাখ্যা দেয়া হতো, কিন্তু বিজ্ঞানের মতে কিছু মানুষ একটা ডিজঅর্ডার নিয়ে জন্ম নেয় যা অন্যদের বিশ্বাস করা লাগে। এডওয়ার্ড মরড্রেক, এক অবিশ্বাস্য ডিজঅর্ডার নিয়ে জন্ম নেয়া মানুষ!

এডওয়ার্ডের গল্প সবসময়ই ছিলো চমৎকার এবং মোহনীয়। ডিপ্রোসোপাস নামের এক বিরল আক্রান্ত হওয়ার ফলে তিনি জন্ম নেন দুইটি মুখ নিয়ে! এবং তার দ্বিতীয় মুখ নিয়ে একটু অদ্ভুত এবং ভয় জাগানো বিষয় আছে।

ডিপ্রোসোপাস নামের এই রোগে সাধারণত মানুষ একটা অতিরিক্ত নাক কিংবা কান নিয়ে জন্ম নেন, কিন্তু এডওয়ার্ডের বেলায় সে মাথার পেছনে আরেকটা চেহারা নিয়ে জন্মেছেন। এডওয়ার্ডের কথা সবাই জানতে পারেন ১৮৯৫ সালে বোস্টন পোস্টে একটা লেখা ছাপানোর পর।

এনোমলিস এন্ড কিউরিওসিটিস অফ মেডিসিন অনুযায়ী, ‘মানুষের বিকলাঙ্গতার সবচেয়ে অদ্ভুত এবং বিষাদময় গল্পটি হলো এডওয়ার্ডের, ইংল্যান্ডের এক অভিজাত পরিবারের সন্তান। যদিও তিনি কখনও পারিবারিক নাম ব্যবহার করেননি এবং ২২ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।

এডওয়ার্ড একেবারেই একাকী জীবন-যাপন করতেন এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথেও দেখা করতেন না।’

তখনকার ডাক্তারগণ তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান এবং আত্মহত্যা করতে বলেন। এডওয়ার্ড তখন তাদের কাছে অনুরোধ করেন মৃত্যুর পরে হলেও দ্বিতীয় মুখটা নষ্ট করে ফেলতে যাতে কফিনে সে ফিস্ ফিস্ শব্দ করতে না পারে!

এডওয়ার্ড মরড্রেকের দুইমুখো চেহারা কেমন ছিল তা ফুটিয়ে তুলতে শিল্পী তার আদলে একটা মোমের পুতুল তৈরি করেন।

রয়েল সাইন্টিফিক রিপোর্টের দলিল থেকে এডওয়ার্ডের অবস্থার কথা খুঁজে বের করেছেন লেখক চার্লস হিল্ডার্থ, যদিও এটা এখনও সংশয়ের বিষয় এমন কোন সমাজ আসলেই কি ছিলো কিনা!

এডওয়ার্ড ছিলেন একজন সংগীতজ্ঞ এবং একজন চমৎকার পণ্ডিত। তার এই চমৎকার পরিচিতির ঠিক পেছনেই লুকানো ছিল এক কুৎসিত চেহারা, তার দ্বিতীয় মুখ!

এডওয়ার্ড তার নিজের জমজ মুখের অসস্তিকর ফিস ফিস শব্দের কারণে নির্ঘুম রাত কাটাতেন। এডওয়ার্ড তাই নিজের মৃত্যুর পরেও এই মুখকে নষ্ট করে ফেলতে চেয়েছেন। কঠোর নজরদারীর মধ্যে থেকেও এডওয়ার্ড বিষপান করেন এবং চিরকুট লিখে রেখে যান, যেখানে লেখা থাকে তার এই ভয়ানক মুখ মৃত্যুর পর নষ্ট করার কথা।

এডওয়ার্ডের এমন দুই মুখের কাহিনীকে অনেক সিনেমাতে কাজে লাগানো হয়, যেমন হ্যারি পটার সিরিজের ফিলোসফারস স্টোন সিনেমায় ভল্ডেমোর্টের চেহারা এক শিক্ষকের পেছনে লাগানো ছিল!

এডওয়ার্ড মরড্রেক আসলেই পৃথিবীতে ছিলেন কিনা এই ব্যাপারে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানকে ধন্যবাদ কারণ এডওয়ার্ডের মত আর কেউ এমন কষ্ট ভোগ করলে তাকে আর আত্মহত্যা করতে হবে না।

শেয়ার করুন: