পাপ ছাড়েনা বাপরে…

নারায়ণগঞ্জ জেলার আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুু এখন বন্ধু প্রবীর হত্যার ঘাতক কিলার পিন্টু দেবনাথ। শহরের আমলাপাড়াস্থ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ হত্যাকান্ডের পর একে একে বের হয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।

প্রথমে নিখোঁজের ২১ দিন পর প্রবীরের ৭ টুকরো মরদেহ উদ্ধার। হত্যাকারী পিন্টুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানা যায়, বন্ধু প্রবীরকে হত্যা করা হয় ৩টি কারণে।

যা হলো বন্ধকী স্বর্ণ ও অর্থ আত্মসাত, নারী কেলেংকারী (তৃতীয় পক্ষ বড় ভাইয়ের কু-প্ররোচনা) ক্ষোভে হত্যা করার পর একাই বাথরুমে বসে ৭ টুকরো করে প্রবীরের মরদেহ।

এদিকে সাংবাদিকদের ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর একটি খুনের রহস্য উন্মোচন হতে না হতেই, এর সূত্র ধরেই আরেক খুনের সন্ধানে অগ্রসর হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

প্রায় ২১ মাস আগে ২৭ অক্টোবর ২০১৬ বিকেলে নিতাইগঞ্জের কাচারি গলির নিজ বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি স্বপন। সে মৃত সোনাতন চন্দ্র সাহার ছেলে।

তবে স্বপন নিখোঁজ নয়, গুমের শিকার হয়েছে তথ্য পায় ডিবি পুলিশের চৌকশ অফিসার প্রবীর হত্যাকান্ডের তদন্ত কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম পিপিএম। তার পাষন্ড বন্ধু পিন্টু দেবনাথই স্বপনকে হত্যার পর লাশ গুম করার লক্ষ্যে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়েছে। আরো ২১ মাস আগেই সে এ কাজটি নিঁখুতভাবে সম্পন্নও করেছে।

এদিকে স্বপন দাস নিখোঁজের ঘটনায় সদর মডেল থানায় সোমবার (১৬ জুলাই) বিকেলে তাঁর বড় ভাই অজিত কুমার দাস বাদী হয়ে চারজনকে আসামী করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় পিন্টুর বান্ধবী রত্না চক্রবর্তীকে প্রধান আসামী করা হয়। এছাড়াও আসামী করা হয়েছে প্রবীরের হত্যাকারী পিন্টুু দেবনাথ, তার সহযোগী বাপন ভৌমিক ওরফে বাবু ও মামুন মোল্লাকে।

মামলার এজাহারে বাদী অজিত কুমার সাহা জানান, স্বপন কুমার সাহা ছিলেন খুচরো কাপড় ব্যবসায়ী। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। পরে স্বপনের বন্ধু কালীরবাজার এলাকার পিন্টু দেবনাথকেও জিজ্ঞেস করি।

কিন্তু পিন্টু বলে আসছিলেন স্বপন ভারত চলে গেছে। গত ৯ জুলাই প্রবীর ঘোষের লাশ উদ্ধারের পর পিন্টুর প্রতি আমাদের সন্দেহ বাড়ে। পরে ১৫ জুলাই বিষয়টি ডিবিকে জানালে রিমান্ডে থাকা পিন্টুর সহযোগি বাপন ভৌমিক বাবু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

সে তখন পিন্টুু দেবনাথের এক বান্ধবী রত্মা রাণী চক্রবর্তীর সন্ধান দেন। তার মোবাইল নাম্বার পর্যালোচনা করে জানা গেছে স্বপনের মোবাইলটি রত্মা ব্যবহার করছে।

এ ঘটনায় পিন্টুর বান্ধবী রত্না চক্রবর্তী ও আমলাপাড়া এলাকার মৃত মহসিন মোল্লার ছেলে মামুন মোল্লাকে রোববার (১৫ জুলাই) মধ্য রাতে গ্রেফতার করা হয় ।

এরমধ্যে রত্নার কাছ থেকে নিখোঁজ স্বপনের মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। রত্মা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে পিন্টু দেবনাথের বাসায় বসে স্বপনকে হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। মূলত পিন্টুর টাকা নিয়ে স্বপন ভারতে একটি ফ্লাট বাসা ক্রয় করে। ওই ফ্লাট বাসা স্বপন না দিয়ে বরং উল্টো হুমকি দিচ্ছিল।

এসব কারণেই ২০১৬ সালের মার্চে আমলাপাড়া এলাকার মোল্লা মামুন নিজেই পিন্টুকে হুমকি দিত। সে পিন্টুর কাছ থেকে দুইজনের নাম করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম পিপিএম, রত্না ও মামুনের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, প্রবীর হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে পিন্টুর জবানবন্দীতে প্ররোচনাকারী হিসেবে মামুনের নাম ওঠে আসে।

এছাড়া রত্না কাছ থেকে নিখোঁজ স্বপন দাসের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করতে পারছি না।

এদিকে গ্রেফতার মামুন ও রত্নাকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে শুনানি শেষে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পুলিশের এসআই কামাল হোসেন।

এছাড়াও প্রবীর ও স্বপন হত্যায় একটি চক্র জড়িত তা আগেই সন্দেহ করা হচ্ছিলো। যদিও পিন্টু দাবি করেছিলো প্রবীর হত্যা সে একাই করেছিলো, এমন দাবি করে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও দিয়েছে।

কিন্তু তা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কেননা, পিন্টুর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিলো। এমন ব্যক্তির পক্ষে একা একজন সুস্থ সবল মানুষকে হত্যা করা অবিশ্বাস্য। তাছাড়াও প্রবীর হত্যার পর আলোচনা ওঠেছিলো পিন্টুর দেবনাথের ওস্তাদ অপু কর্মকারের বিষয়টি।

গুঞ্জন ওঠেছে, এই অপু কর্মকারকেও এর আগে হত্যা করা হয়েছিলো। এরপর তাঁর ছেলে রনিকে হত্যা করা হয়েছিলো। এবং এসব হত্যার নেপথ্যে ছিলো পরকীয়া প্রেম। আলোচনায় রয়েছে, অপু কর্মকারের স্ত্রী শীলা রানীর সাথে পিন্টু দেবনাথের পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো। আর এর জের ধরেই অপু ও তাঁর ছেলে রনিকে হত্যা করা হয়েছিলো।

সার্বিক বিশ্লেষনে অনেকেই ধারণা করছেন এবং স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রবীর হত্যার সূত্র ধরে যখন স্বপন দাসের হত্যার বিষয়টি বের হয়ে এসেছে তখন অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করলে অপু কর্মকার এবং তাঁর ছেলে রনির বিষয়টিও বের হয়ে আসতে পারে। তবে এর জন্য দরকার শীলা রানীকে আইনের আওতায় আনা।

নরপিচাশ পিন্টুু আসলে পেশাদার অপরাধীতে পরিণত হয়েছে। তার পাপের পাল্লা এবার অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে এটা অনুভব করতে পারেনি পাপ ছাড়েনা বোপেরে!

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৭ জুলাই ২০১৮, ১০:২৯ অপরাহ্ণ ১০:২৯ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • অর্থনীতি

আগস্টে কমল মূল্যস্ফীতি

চলতি বছরের গত আগস্ট মাসে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:১৫ অপরাহ্ণ
  • জাতীয়

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করা হবে: ড. ইউনূস

জুলাই বিপ্লবে সকল শহীদে স্বপ্ন পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:০৭ অপরাহ্ণ
  • জাতীয়

নতুন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন

রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে নতুন পররাষ্ট্রসচিব করা হয়েছে। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের স্থলাভিষিক্ত…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ণ