‘৩০ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি, কোনো মায়ের বুক খালি করিনি’

‘ভাইরে, ৩০ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। এত বছরেও কোনো মায়ের কোল খালি করিনি। রাস্তায় নামলেই মনে হয়, আমার মাধ্যমে যেন দুর্ঘটনা না ঘটে। কোনো মা-বাবার অভিশাপ যেন না নিতে হয়। কত সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাই। কিন্তু ওরা আমার মানিককে কেড়ে নিল।’

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে অশ্রু ভেজা চোখ আর কান্না জড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মীমের বাবা জাহাঙ্গীর ফকির।

২৯ জুলাই, রবিবার বাস দুর্ঘটনায় নিহত রাজধানীর শহীদ বীরবিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মীমের বাবা জাহাঙ্গীর। তিনি ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের একতা পরিবহনের চালক।

‘৩০ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি, কোনো মায়ের বুক খালি করিনি’...মীমের বাবা জাহাঙ্গীর ফকির

জাহাঙ্গীর ফকির আরও বলেন, ‘এখন দেখি যার-তার হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং। লাইসেন্স থাকা না থাকারও বালাই নেই। নেশাখোররাও গাড়ি চালায়। আবার কেউ গাড়ি চালানোর আগে নেশা করে। কীভাবে তারা রাস্তায় গাড়ি সামলাবে। কীভাবে মানুষ নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

কেন বাস চালকদের রাস্তায় গিয়ে পাল্লা দিয়ে যাত্রী তুলতে হবে। কেন তাদের বোধ নেই, একটু অসতর্ক হলেই কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে। মা-বাবার বুকের ধন কেড়ে নিতে ওদের হৃদয় কি কেঁপে ওঠে না।

ওরা কি রক্ত-মাংসের মানুষ নয়। বাসের যারা চালক তারাও কোনো মা-বাবার সন্তান। তাহলে কীভাবে তারা রাস্তায় নেমে এমন নির্দয় ও নিষ্ঠুর হতে পারে।’

‘৩০ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি, কোনো মায়ের বুক খালি করিনি’...মীমের বাবা জাহাঙ্গীর ফকির

দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ছোট্ট গোছানো সংসার জাহাঙ্গীরের। বড় মেয়ে রোকেয়া খানম রিয়া পড়েন মহাখালী টিঅ্যান্ডটি কলেজে।

ছোট ছেলে রিয়াদুল ইসলাম আইপিএস স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। বড় মেয়েকে চিকিৎসক আর ছোট মেয়ে মীমকে ব্যাংকার বানানোর ইচ্ছে ছিল তার। তবে দুর্ঘটনার পর সেই স্বপ্ন পূরণ আর হলো না বলে জানান।

শেয়ার করুন: