হাজরে আসওয়াদে চুম্বনরতদের ভিড়

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সুরক্ষার জন্য কাবাগৃহ মোটা কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। হাজরে আসওয়াদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বিগ্ন সৌদি কর্তৃপক্ষ সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে রক্ষী মোতায়েন করেছে।

প্রহরীরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখেন হাজরে আসওয়াদ ও এর আশপাশে সমবেত হওয়া অগণিত মুসলিমের দিকে। সেই সাথে হাজরে আসওয়াদে সঠিকভাবে চুমু খেতে হবে কিভাবে তাও দেখিয়ে দেন। যারা হাজরে আসওয়াদে চুমু খেতে চান তাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও তাদের।

হাজরে আসওয়াদে চুম্বনরতদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। রক্ষী হজযাত্রীদের উদ্দেশ্যে বারবার বলছেন, আপনারা জটলা পাকিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে নিয়ে আসবেন না। সাবধানতা অবলম্বন করুন।

ধীরস্থীরভাবে হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করে চলে যান। কাবাগৃহের দেয়ালে কাপড় বেঁধে সামনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে হজযাত্রীদের সতর্ক করছেন এক ব্যক্তি। জানা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় সেই দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে পরিবর্তন করা হচ্ছে। পালাক্রমে সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

কাবাঘরের পূর্ব কোণে লাগানো বেহেশতি পাথর হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন হজযাত্রীরা। হজ পালনের সময় হাজরে আসওয়াদের (কালো পাথরে) দিকে বিশেষ আগ্রহ থাকে সবার।

হাজরে আসওয়াদ পবিত্র কাবা ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, মাটি থেকে ১.১০ মিটার উচ্চতায় স্থাপিত। হাজরে আসওয়াদ দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১৭ সেন্টিমিটার। এর চারপাশে রুপার বেষ্টনী দেওয়া রয়েছে। সেই বেষ্টনীর ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে এ পাথরে চুমো দিতে হয়।

কাবা পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন- এটা নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। তখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের

গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন, গোত্র প্রধানরা চাদরটি ধরে কাবা চত্বর পর্যন্ত নিয়ে গেলে নবী করিম (সা.) নিজ হাতে তা কাবার দেয়ালে স্থাপন করেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান।

তিরমিজি শরীফে আছে- হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নেমে এসেছে। আর এর রঙ দুধের চেয়ে সাদা ছিলো। অন্য বর্ণনায়, বরফের চেয়েও সাদা ছিলো। পরে আদম সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দেয়।’

আগে হাজরে আসওয়াদ একখণ্ড ছিলো। কারামাতা সম্প্রদায় ৩১৯ হিজরিতে পাথরটি উঠিয়ে নিজেদের অঞ্চলে নিয়ে যায়। ওই সময় পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরো হয়ে যায়। এ টুকরোগুলোর সবচেয়ে বড়টি খেজুরের মতো।

টুকরোগুলো বর্তমানে অন্য আরেকটি পাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যার চারপাশে দেওয়া হয়েছে রুপার বেষ্টনী। তাই রুপার বর্ডারবিশিষ্ট পাথরটি চুম্বন নয় বরং তাতে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদের টুকরোগুলো চুম্বন বা স্পর্শ করতে পারলেই শুধু হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শ করা হয়েছে বলে ধরা হয়।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহর কসম, হাজরে আসওয়াদকে আল্লাহ কেয়ামতের দিন পুনরুত্থান করবেন। তার থাকবে দু’টি চোখ যা দিয়ে সে দেখবে, আর থাকবে একটি জিহ্বা, যা দিয়ে সে কথা বলবে। যে তাকে চুম্বন বা স্পর্শ করবে, তার পক্ষে সে কেয়ামতের দিন সাক্ষী দেবে।’

সাহাবায়ে কেরাম হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ ও চুম্বন করেছেন। উমর ফারুক (রা.) হাজরে আসওয়াদকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘আমি জানি, তুমি একখানা পাথর, তোমার উপকার ও ক্ষতিসাধন করার কোনো ক্ষমতা নেই। যদি আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) তোমার গায়ে চুমু দিতে না দেখতাম, তাহলে আমি কখনো তোমাকে চুমু দিতাম না।’

শেয়ার করুন: