এলাকাবাসী পাগল বলেছিল

সাপ মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। সাপ দেখলে ভয় পান না আমাদের সমাজে এমন লোক নেই বললেই চলে। সাপের দেখা দেখলেই লাঠিসোটা নিয়ে মারার চেষ্টা করা আমাদের যেন অভ্যাস। সেই সাপকেই বশে এসে খামার গড়ে তুলেছেন রাজবাড়ীর রবিউল আলম রঞ্জু। নাম দিয়েছেন ‘রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম’।

তবে সাপ পালনের ছাড়পত্র না পেয়ে সামনে আগাতে পারছেন না তিনি। সরকারের অবহেলা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না পেয়ে অপার সম্ভাবনাময় সাপ পালন মুখ ধুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজবাড়ী স্নেক ফার্মের মালিক ও উদ্যোক্তা রবিউল আলম রঞ্জু মল্লিক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কাঁসাদহ গ্রামে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ৮৩ শতাংশ জমির ওপর ৬ প্রজাতির ৫০টি বিষধর গোখরা সাপ নিয়ে কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক মিলে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম’ নামে একটি সাপের খামার গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে খামারটিতে ডিম উৎপাদন ও বাচ্চা ফোটানোর কাজও শুরু হয়।

খামারে দিন দিন সাপের সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি বাড়তে থাকে পরিচর্যার খরচ। খামারটি গড়ে তোলার প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও নিবন্ধন না পেয়ে তারা। তবে নিবন্ধন পেতে নিয়ম অনুযায়ী তারা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

বর্তমানে রাজবাড়ী স্নেক ফার্মে দুই প্রজাতির ১০টি বিষধর গোখরা সাপ রয়েছে। যার পরিচর্যা ও দেখাশুনা করছেন তিনি নিজেই। নিবন্ধন না পেয়ে নিরুৎসাহিত হওয়ার কারণে দিন দিন সাপ পালন থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন রাজবাড়ীর সাপের খামারের মালিক ও উদ্যোক্তারা।

আগে তারা এলাকায় জনগণকে সাপ মারতে নিষেধ করতেন আর সেই সাপ উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন খামারে। জনগণকে নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করতেন। বর্তমানে তারা আর সাপ উদ্ধার করছেন না। ফলে এলাকাবাসী সাপ দেখলে মেরে ফেলছেন। এতে করে পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ।

রাজবাড়ী স্নেক ফার্মের মালিক ও উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম রঞ্জু মল্লিক বলেন, বেকারত্ব দূর করার ইচ্ছা শক্তি নিয়ে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে সাপের খামারের কিছু তথ্য পাই।

পরে পটুয়াখালীর সাপের খামারি আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে গড়ে তুলি রাজবাড়ী স্নেক ফার্ম নামে সাপের খামার। এলাকাবাসী প্রথমে পাগল বলে আখ্যায়িত করলেও পড়ে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তবে আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি।

সরকারের অবহেলা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনুমোদন না পেয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছি। খামারটি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সাপের খামার করে বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা অনেক সহজ। এতে খরচও অনেক কম। সরকারের সহযোগিতা ও খামারের নিবন্ধন পেলে তারা সাপের বিষ সংগ্রহ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবেন। পাশাপাশি এ খামারের সাপের বিষ দেশের ওষুধ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখাতে পারবে ।

রাজবাড়ী জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্মল কুমার দত্ত জানান, সাপের খামারের লাইসেন্সের জন্য তারা কখন-কোথায় আবেদন করেছেন তা জানা নেই।

তিনি বলেন, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে শুধু হরিণ এবং হাতি লালন-পালনের লাইসেন্স দিয়ে থাকি আমরা। সাপের খামারের কোনো লাইসেন্স দেয়া হয় না। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে সাপ লালন-পালনের কোনো উদ্ধৃতিও দেয়া নেই।

শেয়ার করুন:

এই পোস্টটি প্রকাশিত হয় ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ৩:১৫ অপরাহ্ণ ৩:১৫ অপরাহ্ণ

শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

  • অর্থনীতি

আগস্টে কমল মূল্যস্ফীতি

চলতি বছরের গত আগস্ট মাসে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:১৫ অপরাহ্ণ
  • জাতীয়

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করা হবে: ড. ইউনূস

জুলাই বিপ্লবে সকল শহীদে স্বপ্ন পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪:০৭ অপরাহ্ণ
  • জাতীয়

নতুন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন

রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে নতুন পররাষ্ট্রসচিব করা হয়েছে। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের স্থলাভিষিক্ত…

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ণ