যে পাথরে চুমু খেলে জীবনের, সব ঘুনাহ মাফ হয়ে যায় কিন্তু কেন ? জেনে নিন

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিম উম্মাহ কাবা শরিফে হজ পালন করতে আসেন। সেখানে তারা তাওয়াফের সময় ‘কালো পাথর’ (হাজরে আসওয়াদ) স্পর্শ করেন। আবার অনেকে কালো পাথরে চুম্বন করতেও সামর্থ হন। কিন্তু এ কালো পাথর কি? ইসলামে এর গুরুত্বই বা কি?

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসের আলোকে জানা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কালো পাথরটি জান্নাত থেকে নেমে এসেছিল’ (তিরমিজি)

অন্যত্র প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন জান্নাত থেকে কালো পাথর এসেছিল, তখন তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল, কিন্তু আদমের সন্তানদের পাপের কারণে তা কালো হয়ে যায়। (তিরমিজি)

উল্লেখিত হাদিসে এ কালো পাথরের পরিচয় ও গুরুত্ব সুস্পষ্ট। আর তা হলো- এ পাথর স্পর্শের বা চুম্বনের ফলে মানুষের গোনাহকে পাথরটি শোসন করে নেয়।

হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর স্পর্শ বা চুম্বনের ফলে কিভাবে গোনাহ বা কালো দাগ দূরীভূত হয় এ ব্যাপারে কিছু কথা উত্থাপিত হয়। তাদের জবাবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটি উল্লেখযোগ্য-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন মুমিন ব্যক্তি পাপ করে, তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ দেখা দেয়।

যদি সে অনুতাপ বা অনুশোচনা করে এবং সেই পাপ থেকে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ক্ষমা চায়, তবে তার হৃদয় পরিচ্ছন্ন তথা গোনাহমুক্ত করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ)

কাবা শরিফে অবস্থিত ‘হাজরে আসওয়াদ তথা কালো পাথর পরকালের বিচারের দিন আল্লাহর সামনে কথা বলবে এবং সাক্ষ্য দিবে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তা (কালো পাথর) পুনরুত্থিত করবেন এবং এর (পাথরটির) দু’টি চোখ থাকবে।

যা (দিয়ে সে) দেখতে পাবে এবং একটি জিহ্বা দিয়ে (কালো পাথর) বলবে। (কালো পাথরকে) আন্তরিকতায় স্পর্শকারীদের পক্ষে তা সাক্ষ্য দেবে।’ (তিরমিজি)

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসলমানরা কি হজ বা উমরা কালো পাথর স্পর্শ করবে? আর প্রিয়নবিও কি হজের সময় কালো পাথর তথা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করেছেন? হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় আসলেন, তখন তিনি কালো পাথরে এসে এটিকে স্পর্শ করলেন, তারপর তিনি ডানদিকে গেলেন এবং তিনবার ( কাবা শরিফের চারপাশে) দৌড়ে গিয়ে চারবার হেঁটে গেলেন।’

(মুসলিম) উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, কালো পাথরকে তাওয়াফের আগে ও পরে স্পর্শ বা যায়। আর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কালো পাথরটিকে চুম্বন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসটিই এর প্রমাণ-

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কালো পাথরের নিকট এসে পাথরটিকে চুম্বন করলেন। তারপর তিনি বললেন, আমি জানি যে তুমিই একমাত্র পাথর যে মানুষের কোনো উপকার করতে পারবে না বা ক্ষতিও করতে পারে না। (বুখারী ও মুসলিম)

তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রিয়নবিকে দেখেছি তোমায় চুম্বন করতে; তিনি চুম্বন না করলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।

কালো পাথর স্পর্শ ও একটি অভিপ্রায় হজরত ইবনে ওমর বলেন, আমি প্রিয়নবিকে বলতে শুনেছি যে, তাদের উভয়ের (কালো পাথর ও রোকনে ইয়ামানি) স্পর্শ করা গোনাহ মাফের একটি প্রয়াস।’ (তিরমিজি)

তাওয়াফের ভিড়ে হাজরে আসওয়াদ চুম্বনে করণীয় হজের সময় ভিড়ের কারণে যদি কেউ এ পাথরটি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে স্পর্শ বা চুম্বন করতে ব্যর্থ হয়; তবে যেন অন্য কোনো বস্তুর সাহায্যে হলেও হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করতে হবে এবং চুম্বন করতে হবে।

আর যদি স্পর্শ বা চুম্বনও না করতে পারে তবে তার (কালো পাথরের) দিকে তাকানো উচিত এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলা; যেমনটি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।

যে বিষয়টিতে সতর্ক থাকতে হবে কালো পাথর তথা হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন বা স্পর্শ করতে গিয়ে এ বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, কারো চুম্বন বা স্পর্শের চেষ্টার ফলে যেন অন্য কোনো মুমিন বান্দার ক্ষতি না হয়। ধাক্কাধাক্কির ফলে কেউ যেন কারো ওপর হুমড়ি খেয়ে না পড়ে।

আশা করা যায়, মুসলিম উম্মাহ হাজরে আসওয়াদ তথা কালো পাথরের স্পর্শ এবং চুম্বনের ফলে নিজেদেরকে গোনাহ মুক্ত করতে সক্ষম হবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ পাথরের স্পর্শ বা চুম্বনের ক্ষেত্রে সার্বিক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখার তাওফিক দান করুন। সবাইকে এ পাথরের সুপারিশ তথা সাক্ষ্য লাভের তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালবাসা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন: