কাঁধে বাজার নিয়ে মধ্যরাতে অনাহারির বাসায় সংসদ সদস্য

মধ্যরাতে অনাহারি দরিদ্র পরিবারের ভাঙা কুটিরে কাঁধে বাজার সদাই নিয়ে উপস্থিত একজন সংসদ সদস্য। এমন কথা যদি শোনেন তাৎক্ষণিকভাবে আপনার কী মনে হবে?

মনে হতে পারে আরব্য রজনীর কোনো গল্পের অংশ। আদতে তা নয়। এমনটি ঘটেছে সাতক্ষীরায়। আর এই কাজ করেছেন সাতক্ষীরা চার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার চৌধুরী।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন-ঘেঁষা উপকূলীয় এ আসনের বর্তমান এমপি এসএম জগলুল হায়দার শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

যদিও বলা হচ্ছে ভোটারদের মন জয়ের লক্ষ্যে কখনও লুঙ্গি পরে কোমরে গামছা বেঁধে শ্রমিকদের সঙ্গে নেমে পড়ছেন বেড়ি বাঁধ ও রাস্তা সংস্কারের কাজে; কখনও গভীর রাতে অসহায় মানুষের দুয়ারে গিয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহায়তার হাত।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমেও উঠে আসছে তার কর্মকাণ্ডের বৃত্তান্ত। এমপি জগলুলের এসব কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করছেন অনেকে।

কেউ কেউ বলছেন, এসব স্রেফ মনোনয়ন টেকানোর কৌশল। তবে দলের শীর্ষ পর্যায়ে এসব তৎপরতা ইতিবাচক হিসেবেই গৃহীত হয়েছে বলে দাবি এমপি জগলুল হায়দারের।

তিনি বলেন, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছি। প্রয়োজন ছাড়া এলাকার বাইরে যাইনি। গরিব ও অসহায়দের পাশেই আছি, আগামীতেও থাকব।

গতকাল মঙ্গলবার রাতেও জগলুল হায়দার একটি দরিদ্র পরিবারের বাসায় বাজার সদাই নিয়ে হাজির হয়েছেন। তার কানে আসে তারই এলাকার একটি গ্রামে এক পরিবার না খেয়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে একটি স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় কাঁধে বাজার নিয়ে মধ্যরাতে উপস্থিত হন ওই দরিদ্রের জির্ন কুটিরে। এ বিষয়ে জগলুল হায়দার বলেন, 'মঙ্গলবার রাত ১২ টা।

বাসায় শুয়ে বিশ্রাম করছি। হঠাৎ মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠে। ফোন রিসিভ করে জানতে পারি শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামের আমির আলী গাজীর পরিবারের সদস্যরা খাবারের অভাবে অর্ধাহারে এবং অনাহারে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'পরিবারটির জন্য মন কেঁদে ওঠে। সংবাদ দাতাকে সেখানে অপেক্ষা করতে বলি এবং তাদের জন্য খাবার নিয়ে এখনই আসছি বলে জানাই। তারপর বাসা থেকে চাল, ডাল, তেল এবং পার্শ্ববর্তী ফার্ম থেকে মুরগী নিয়ে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে রওনা হই।

সেখানে পৌঁছে দেখি সংবাদ দাতা ছেলেটি আমির গাজীর বাড়ির সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাকে সাথে নিয়ে খাবারের ব্যাগ নিজে কাঁধে নিয়ে উক্ত বাড়িতে যাই এবং তাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি।'

জগলুল হায়দার নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে বলেন, অসহায় পরিবারটির সদস্যদের কাছে খাবারগুলো দেই এবং নগদ আর্থিক সহায়তা করি। তাদের জীর্ণ কুটির দেখে যতদ্রুত সম্ভব ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য কথা দেই।

তাদের কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চাই। শুধু আজ বলে নয় বহু আগে থেকেই অসহায় মানুষের সেবা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।'

পুরো ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। জগলুল হায়দার বলেন, আমার অজান্তে ওই যুবক ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছে। পরে সেটা আমি পোস্ট করেছি, যেন এরকম অসহায় মানুষের পাশে সকলে দাঁড়ায়।

শেয়ার করুন: