মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবেন মীম। কোনও যানবাহন না পেয়ে মিরপুর ১০ থেকে বিহঙ্গ বাসে উঠলেন। যাবেন বাংলামোটর। সিটিং বাস কিন্তু কোনও সিট খালি নেই। উপায় না দেখে একজনকে রিকোয়েস্ট করে মাকে বসানোর ব্যবস্থা করলেন।
কিছুদূর যাবার পরই কন্ডাকটর ভাড়া চাইলেন। ভাড়া কত? কন্ডাকটর বলল ২৫ টাকা, দুজনে ৫০ টাকা দেন। ৫০ টাকা কেন? ভাড়া তো ১৫ করে ৩০ টাকা। আর নামবো বাংলামোটর। তখন কন্ডাকটর বলল- কারওয়ান বাজার ওয়েবিল সই হয় তাই বাংলামোটর নামতে হলে ৫০ টাকাই দিতে হবে। এটা অতিরিক্ত ভাড়া, কেন দিব? কন্ডাকটর বলল- তাহলে কারওয়ান বাজার নামেন।
মীম বললেন- আমার মা অসুস্থ আর হাসপাতাল বাংলামোটরে, মা হেঁটে যেতে পারবেন না। এই নিয়ে চলল কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা। আর বাসের অন্য যাত্রীরাও নীরব দর্শক। তারপরও একজন বলেই উঠলেন- আমরা প্রতিদিন এ নিয়ে ঝগড়া করে করে ক্লান্ত। বাসের এই লোকেরা জোর খাটিয়েই ভাড়া আদায় করে ছাড়ে। কোনও কিছু বলে আর সমাধান হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ ধরনের বাসগুলো রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলে যাত্রী সংখ্যা ও সিট অনুসারে। এই সিটগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজে পরীক্ষা হয় আর ওয়েবিল নামে একটি কাগজে কোম্পানির কর্মীরা যাত্রী সংখ্যা লিখে দেন। তবে ওয়েবিলে সই করার পরেই বাসগুলো যাত্রী তুলছে লোকাল বাসের মতো আর যেতে হচ্ছে দাঁড়িয়েও।
মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহন চলছে এভাবেই। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো নামানো, যাত্রী নেয়া হচ্ছে দাঁড় করিয়ে অথচ ভাড়া নেয়া হচ্ছে সিটিং সার্ভিসের।
ওয়েবিল সেবার নিয়ম হচ্ছে- মিরপুর-১০ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ভাড়া ১৫ টাকা। কারওয়ান বাজার সিগন্যাল পার হলেই ভাড়া বাড়ছে আরও দশ টাকা। ফলে বাংলামোটর বা শাহবাগ নামলেও যাত্রীকে ভাড়া গুণতে হবে ২৫ টাকা। তাছাড়া বাংলামোটর সিগন্যালে এই পরিবহনের কোনও স্টপেজ নেই। তাই যেখানে ওয়েবিল সই হয় সেখানেই যাত্রীরা নামতে বাধ্য হন।
ওয়েবিল সেবার এই নিয়মের কারণে এরকম ঘটনা ঘটছে আরও অনেক বাসে। এ নিয়ে প্রতিদিনই আপত্তি জানাচ্ছেন যাত্রীরা আর চলছে ঝগড়া এমনকি মারামারিও।
বিহঙ্গ পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘একটি ওয়েবিল থেকে আরেকটি ওয়েবিল পর্যন্ত ১০ টাকা ভাড়া নেবে। কারওয়ান বাজার থেকে বাংলামোটর কত দূর? এইটুকু জায়গার জন্য আমি দশ টাকা কেন দেব?
এরা একটা ফাজলামি পেয়েছে। মানুষকে জিম্মি করছে। আমার মনে হয় না গাড়ির মালিকদের এমন নিয়ম আছে। এটা ড্রাইভার-হেলপাররা মিলে বাড়তি আয়ের ধান্দা করছে। অথচ সরকার ভাড়ার জন্য আলাদা চার্ট করে দিছে, সেগুলো বাদ দিয়ে তারা একরকম ডাকাতিই করছে।’