‘কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনৈতিক ও প্রতারণামূলক’

ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনকে ‘অনৈতিক ও প্রতারণামূলক’ বলেছে নেপাল সরকারের তদন্ত কমিশন। ২৭ আগস্ট, সোমবার কমিশনের সদস্য সচিব বুদ্ধি সাগর লামিচ্ছানে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

চলতি বছরের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-২১১ মডেলের উড়োজাহাজ।

দুর্ঘটনার পরে অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন গঠন করে নেপাল সরকার। কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ২৭ আগস্ট নেপালের ইংরেজি দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট খবর প্রকাশ করে।

কাঠমান্ডু পোস্টের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান পাইলট আবিদ সুলতান ‘ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও উদ্বেগের’ মধ্যে ছিলেন। ফ্লাইটের পুরো সময়টাতে ককপিটে বসেই ক্রমাগত ধূমপান করেছিলেন তিনি। ত্রিভুবনে নামার প্রস্তুতির সময় আবিদ সুলতান বার বার ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন এবং বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ‘অসত্য’ তথ্য দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনা ঘটে।

কাঠমান্ডু পোস্টের এই প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে নেপালের তদন্ত কমিশন। কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ‘অসম্পূর্ণ ও অপ্রকাশিত’ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কাঠমান্ডু পোস্টে সংবাদ প্রকাশ অনৈতিক ও প্রতারণামূলক।

তদন্ত কমিশন বলছে, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ওই ঘটনায় নেপাল এবং বন্ধুপ্রতিম দেশের নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটেছে। যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই না করে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা কোনোভাবেই উচিৎ নয়। কমিশন বিশ্বাস করে, দুর্ঘটনার তদন্ত ‘গণমাধ্যমের প্রপাগান্ডার’ বিষয় নয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনটি সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভুল ধারণা ও বিশ্বাসের জন্ম দেবে। এ ঘটনায় কমিশন ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং অসন্তুষ্ট’। কাঠমান্ডু পোস্টের ওই প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে কমিশন।

বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিশন জানায়, কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হল ওই দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করা। তদন্ত সম্পন্ন হলে নেপাল সরকারের নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

এদিকে কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনটিকে ‘কল্পিত ও ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

১২ মার্চ ঢাকা থেকে নেপালের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলার বিএস-২১১ মডেলের উড়োজাহাজটি অবতরণের সময় নেপালের স্থানীয় সময় ২টা ২০ মিনিটে একটি ফুটবল খেলার মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে উড়োজাহাজটির ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জন নিহত হয়।

দুর্ঘটনার পর নয়জন বাংলাদেশি, ১০ জন নেপালি ও একজন মালদ্বীপের নাগরিককে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে বিমানটির প্রধান পাইলট আবিদ সুলতানও ছিলেন। পরদিন ১৩ মার্চ সকালে কাঠমান্ডুর নারভিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবিদ সুলতানও মারা যান।

শেয়ার করুন: