শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় থামছেই না পদ্মা নদীর ভাঙন। তবে এক সপ্তাহ আগের চেয়ে ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার নড়িয়ার কেদারপুর, উত্তর কেদারপুর, শুভগ্রাম, বাঁশতলা ও নড়িয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব নড়িয়া গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে আরও ৪টি ভবন। ভাঙন আতঙ্কে তিনটি গ্রামের ৩০টি পরিবার তাদের বসতবাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেদারপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড কেদারপুর গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ আব্দুর জাব্বার খানের দোতলা ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বুধবার সকালে নড়িয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব নড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সবুজ হাওলাদারের তিনতলা ভবন ‘লাইফ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া বৃহস্পতিবার ভোরে একই গ্রামের ইউসুফ খান ও হাসান খানের একতলা বাড়িটি নদী গর্ভে চলে যায়।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মাঠের পাঁচ মিটার জায়গা ধসে গেছে। ৫০ সয্যা বিশিষ্ট নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটি অর্ধেকের বেশি নদী গর্ভে চলে গেছে। একই সঙ্গে ঝর্ণা খানের তিনতলা ভবন ও হযরত খাজা মঈনদ্দিন চিশতির মেহমান খানা যে কোনো সময় নদীর পেটে চলে যেতে পারে।
নড়িয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব নড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সবুজ হাওলাদার বলেন, আমি ১৫ বছর যাবত ইতালি থাকি। এতো বছরে ইতালি থেকে যে টাকা আয় করেছি তা দিয়ে এলাকার স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে ‘লাইফ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি ক্লিনিক তৈরি করেছিলাম।
দীর্ঘ দিন নড়িয়া এলাকার মানুষের সেবাও চলছিল এই ক্লিনিকটিতে। সেই ক্লিনিকটি বুধবার সকালে নদী গর্ভে চলে গেছে। আমার আর কিছু রইল না।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মান্নান খান বলেন, পদ্মার ভাঙনে আমরা নিস্ব হয়ে গেলাম। আমাদের বাড়ি ১২ একর ফসলি জমি, নয়টি দোকান বিলীন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় আমার বাবা আলহাজ আব্দুর জাব্বার খানের দোতলা বাড়িটি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নদীতে চলে গেছে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, নদীতে স্রোত আছে। এ কারণে ভাঙন হচ্ছে। স্রোত কমিয়ে ভাঙন রোধ করার জন্য নদীতে ড্রেজিং করা হবে। সে কারণে জরিপ করা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ড্রেজিং শুরু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মা নদীতে ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩ দশমিক ৮২ মিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ভাঙন রোধে তিনটি বড় ড্রেজার এনে এক সঙ্গে নদী খননের কথা থাকলেও চার দিন আগে একটি ড্রেজার এসে পৌঁছেছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। তবে আজও পৌঁছেনি বাকি দুইটি ড্রেজার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ক্রিয়েটিভ সার্ভে নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে গত তিন দিন থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার ১০টি পয়েন্টে জরিপ কাজ পরিচালনা করছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত তারা ১৬টি পয়েন্টে জরিপ শেষ করেছে। পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও দুইদিন। এরপর প্রতিবেদন দাখিলের পর পাউবো খননের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে জরিপ সংস্থা।