বাজার থেকে নামি ব্রান্ডের সয়াবিন/সরিষার তেল কিনে খাচ্ছেন?

দেশের বড় একটি সয়াবিন তেলের নামের সঙ্গে মিল রেখে দিয়েছেন নিজের ব্র্যান্ডের নাম ‘সুইট রাধূনী’। বোতলের মোড়কে লেখা ‘১০০% সুপার রিফাইন্ড’, ‘ফর্টিফাইড সয়াবিন তেল’। অথচ এসবের প্রমাণ করার কেউ নেই।

কারণ মালিক একাই ব্যবসা চালান, প্যাকিং করেন দুজন কর্মচারী। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনে (বিএসটিআই) অনুমোদন না নিয়ে এই তেল বাজারজাত করেছেন। ব্যবহার করেছেন বিএসটিআইর ভুয়া সিল।

এই তেলের মান সম্পর্কে বোতলের মোড়কে যা বলা আছে তার ১৬ আনাই মিছে। এসব অভিযোগে ‘সুইট রাধূনী’ নামের এই তেলের ব্র্যান্ডের মালিক ইসহাক হোসেনকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত চলে এই অভিযান। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআইর প্রতিনিধি ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা।

সরেজমিনে অভিযানে গিয়ে দেখা গেল, পুরান ঢাকার সোয়ারী ঘাটের ছোট কাটরার একটি জরাজীর্ণ ভবনের দোতলায় আনুমানিক ৪০০ স্কয়ারফিটের ঘর নিয়ে চলছে সুমন ফুড প্রোডাক্টসের কারখানা। কারখানায় তেল ও লেবেল লাগানো তেলের খালি বোতল ছিল।

বোতলটির পেছনে ‘স্পেসিফিকেশন’র জায়গায় লেখা ছিল অনেক গুণাগুণ ও তথ্য। কিন্তু এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স ছিল না।

লেবেলে তেলের উৎপাদনের তারিখ এপ্টিল(এপ্রিল) ভুল বানানে ২০১৮ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এপ্টিল (এপ্রিল) ২০২০ লেখা রয়েছে। লেবেলে মাসের নাম ইংরেজিতে ভুল ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিএসটিআইয়ের একটি ভুয়া সিল।

ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশ্নের জবাবে ব্র্যান্ডের মালিক ইসহাক জানালেন, তিনি রাজধানীর গভর্মেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।

এরপরও কেন এমন অনৈতিক কাজ? উত্তরে ইসহাক বলেন, ৫ বছর আগে বিএসটিআইয়ের কাছে লাইসেন্সের আবেদন করেছিলাম। পরিবেশের কারণে দেয়নি। তাই…।

বিএসটিআইয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ইসহাককে এক লাখ টাকা জরিমানা ও তার কারখানাটিকে সিলগালা করা হয়। ইসহাক তার দোষ স্বীকার করে পরবর্তীতে এমন না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

একই অভিযানে ২৯/৪ সোয়ারীঘাটে বিস্কুটের প্যাকেটে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও সর্বোচ্চ খুচরামূল্য না থাকায় সাইফুল ইসলাম নামে একটি কারখানার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা হয় কয়েক বস্তা বিস্কুট।

বিএসটিআইয়ের গুণগত মান বজায় না রেখে তেল প্যাকেটজাত করার অভিযোগে ৫/৩ চম্পাতলীর সাইফ এ্যাডিবল অয়েলের মালিক জীবন সাহাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স না নিয়ে তেল বিক্রি করায় চম্পাতলীর এন ট্রেডার্সের মালিক মনির হোসেনকেও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অবৈধ ও প্রতারণার মাধ্যমে অপরিশোধিত পানি জারে করে ‘ফিল্টার পানি’ বলে বিক্রির দায়ে এম এ ড্রিংকিং ওয়াটারকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও কারখানাটিকে সিলগালা করা হয়। বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স নবায়নের আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান সিলগালা থাকবে বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট।

অভিযানের বিষয়ে মশিউর রহমান বলেন, ডিবি পুলিশের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানগুলো চালানো হয়েছে। রমজান মাসজুড়ে ডিএমপির এই অভিযান চলবে।

শেয়ার করুন: